Skip to main content

সংখ্যা (Numbers - Definition, Facts & Example)

সংখ্যা (Numbers - Definition, Facts & Example)
সংখ্যা (Numbers - Definition, Facts & Example)


গণিত, যা কারো কাছে বিভীষিকা আবার কারো নিকট নেশা। গণিতের মূল ভিত্তি ডিজিট বা অঙ্ক, আর এক বা একাধিক অঙ্কের সমন্বয়ে গঠিত হয় সংখ্যা। সংখ্যা ছাড়া গণিতের অস্তিত্ব কল্পনাতীত। একটি সংখ্যার নানা রকম শ্রেণীবিন্যাস। বাস্তব, অবাস্তব, মূলদ, অমূলদ, পূর্ণসংখ্যা, ভগ্নাংশ, স্বাভাবিক সংখ্যা, শূন্য, ঋণাত্মক সংখ্যা, মৌলিক সংখ্যা, কৃত্রিম সংখ্যা, জোড় সংখ্যা, বিজোড় সংখ্যা ইত্যাদি। এসব সংখ্যার আবার নানাবিধ হিসাব নিকাশ। এই অধ্যায়ে আমরা বিভিন্ন প্রকারের সংখ্যা নিয়ে আলোচনা করব এবং বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় কিভাবে স্বল্পতম সময়ে এই সমস্যাবলি নিখুঁতভাবে সমাধান করা যায় তা নিয়ে বিস্তারিত অলোচনা করব। একইসাথে বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় আসা গাণিতিক সমস্যা নিয়েও আলোকপাত করব।

একক সংখ্যা (Unit Number)

গণিতে 1 কে একক সংখ্যা বলে।  

মৌলিক সংখ্যা (Prime Number)

যেসব সংখ্যার 1 ও ঐ সংখ্যা ব্যতীত অন্য কোন উৎপাদক নেই তাদের মৌলিক সংখ্যা বলে। যেমনঃ 2, 3, 5, 7, 13, 29 প্রভৃতি মৌলিক সংখ্যা। বি. দ্র.: 2 হল একমাত্র জোড় মৌলিক সংখ্যা।  

কৃত্রিম সংখ্যা (Composite Number)

যেসব সংখ্যার 1 ও ঐ সংখ্যা ব্যতীত আরো গুণনীয়ক বা উৎপাদক আছে তাদের কৃত্রিম সংখ্যা বলে। যেমনঃ 4=2×2; 49=7x7; 48=2×2×2×2×3 প্রভৃতি।

মৌলিক সংখ্যা নির্ণয়ের পরীক্ষা

মনে করি, একটি সংখ্যা p মৌলিক কিনা তা আমাদের বের করতে হবে। আরেকটি সংখ্যা n বিবেচনা করি; যেখানে n2 হল p এর সবচেয়ে কাছাকাছি একটি পূর্ণবর্গ সংখ্যা কিন্তু n2 এর মান p এর থেকে বড় অথবা সমান। অর্থাৎ, n2 ≥ p এখন আমাদের পরীক্ষা করতে হবে n বা তার থেকে ক্ষুদ্রতর কোন মৌলিক সংখ্যা দ্বারা p নিঃশেষে বিভাজ্য কিনা। নিঃশেষে বিভাজ্য হলে, p কৃত্রিম সংখ্যা, অন্যথায়  মৌলিক সংখ্যা। এই শর্ত প্রয়োগ করে এবং বিভাজ্যতার সূত্রাবলির সাহায্যে আমরা সহজেই একটি সংখ্যা মৌলিক কিনা তা বের করতে পারি।

গাণিতিক সমস্যা

নিচের সংখ্যাগুলো মৌলিক কিনা তা যাচাই করুন।
  • 173
  • 319
  • 811
  • 137
  • 437

সমাধান

এই সমস্যাবলি সমাধানের আগে আমরা বিভাজ্যতা অধ্যায় থেকে 3, 5, 7, 11, 13, 17, 19, 23, 29 দ্বারা বিভাজ্যতার সূত্রগুলো দেখে আসব।
  • 173

132 = 169 < 173; 142 = 196 > 173 14 এর থেকে ক্ষুদ্রতম মৌলিক সংখ্যা হল 2, 3, 5, 11, 13
  • 3 দ্বারা বিভাজ্যতাঃ 1+7+3 = 11; সুতরাং 3 দ্বারা বিভাজ্য নয়।
  • 5 দ্বারা বিভাজ্যতাঃ শেষে 0 বা 5 নাই, সুতরাং 5 দ্বারা বিভাজ্য নয়।
  • 11 দ্বারা বিভাজ্যতাঃ 1+7-3 = 5; সুতরাং 11 দ্বারা বিভাজ্য নয়।
  • 13 দ্বারা বিভাজ্যতাঃ 17+3×4 = 29; সুতরাং 13 দ্বারা বিভাজ্য নয়।
অর্থাৎ, 173 মৌলিক সংখ্যা।  
  • 319

182 = 324 > 319 18 এর থেকে ক্ষুদ্রতম মৌলিক সংখ্যা হল 2, 3, 5, 11, 13, 17 11 দ্বারা বিভাজ্যতাঃ 3+9-1 = 11; সুতরাং 11 দ্বারা বিভাজ্য। অর্থাৎ, 319 কৃত্রিম সংখ্যা।  
  • 811

292 = 841 > 811 29 এর থেকে ক্ষুদ্রতম মৌলিক সংখ্যা হল 2, 3, 5, 11, 13, 17, 19, 23, 29 এদের কোনটি দ্বারাই 811 নিঃশেষে বিভাজ্য নয়। অর্থাৎ, 811 মৌলিক সংখ্যা।  
  • 137

122= 144 > 137 12 এর থেকে ক্ষুদ্রতম মৌলিক সংখ্যা হল 2, 3, 5, 11 এদের কোনটি দ্বারাই 137 নিঃশেষে বিভাজ্য নয়। অর্থাৎ, 137 মৌলিক সংখ্যা।  
  • 437

202 = 400 < 437; 212= 441 > 437 21 এর থেকে ক্ষুদ্রতম মৌলিক সংখ্যা হল 2, 3, 5, 11, 13, 17, 19 19 দ্বারা বিভাজ্যতাঃ 43 + 7×2 = 57 = 3×19; সুতরাং 19 দ্বারা বিভাজ্য। অর্থাৎ, 437 কৃত্রিম সংখ্যা।  

যুগ্ম/ জোড় সংখ্যা (Even Number)

  • ২ দ্বারা নিঃশেষে বিভাজ্য সংখ্যা যুগ্ম বা জোড় সংখ্যা। যেমন - 2, 4, 6 ইত্যাদি।
  • অযুগ্ম/ বিজোড় সংখ্যা (Odd Number)
  • ২ দ্বারা অবিভাজ্য সংখ্যা অযুগ্ম বা বিজোড় সংখ্যা। যেমন - 1, 3, 5 ইত্যাদি।
 

পরিশিষ্ট (Appendix)

  • জোড় সংখ্যা ± জোড় সংখ্যা = জোড় সংখ্যা
  • জোড় সংখ্যা ± বিজোড় সংখ্যা = বিজোড় সংখ্যা
  • বিজোড় সংখ্যা ± বিজোড় সংখ্যা = জোড় সংখ্যা
  • জোড় সংখ্যা × জোড় সংখ্যা = জোড় সংখ্যা
  • জোড় সংখ্যা × বিজোড় সংখ্যা = জোড় সংখ্যা
  • বিজোড় সংখ্যা × বিজোড় সংখ্যা = বিজোড় সংখ্যা
  অর্থাৎ, যোগ বিয়োগের ক্ষেত্রে, একটি জোড় এবং একটি বিজোড় সংখ্যার যোগফল বা বিয়োগফল বিজোড় সংখ্যা, কিন্তু দুইটি  জোড় সংখ্যা ও দুইটি বিজোড় সংখ্যার যোগফল বা বিয়োগফল সর্বদা জোড় সংখ্যা। যেমনঃ 12+8=20; 7+16=22; 46+77=123. আবার, গুণের ক্ষেত্রে, সবগুলো বিজোড় সংখ্যা হলে গুণফল বিজোড় সংখ্যা, একাধিক সংখ্যার গুণনে  ন্যূনতম একটি জোড় সংখ্যা থাকলেও গুণফল জোড় সংখ্যা। যেমনঃ 3×4×5×7=420.  

বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

সমস্যা-

যে কোন দুইটি ক্রমিক পূর্ণ সংখ্যার অন্তরের মান সর্বদা- ক. জোড় সংখ্যা খ. বিজোড় সংখ্যা গ. মৌলিক সংখ্যা

সমাধান

মনে করি সংখ্যা দুইটি aa+1 (a+1)2 - a2 = a2 + 2a + 1 - a2 = 2a+1 এখন, a যেকোন পূর্ণ সংখ্যা হলে, 2a জোড় সংখ্যা অথবা শূন্য হবে। অর্থাৎ, 2a+1 সংখ্যাটি বিজোড় হবে। উত্তরঃ খ  

সমস্যা-

x y ক্রমিক ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যা হলে, নিচের কোনটি অবশ্যই জোড় সংখ্যা হবে? ক. xy2 খ. xy গ. xy

সমাধান

xy এর একটি জোড় সংখ্যা হলে অপরটি বিজোড় হবে। তাহলে, তাদের গুণফল xy অবশ্যই জোড় সংখ্যা হবে। যেমনঃ 6×7=42; 17×18=306 এখন, তাদের ভাগফল xy হয় জোড় সংখ্যা অথবা ভগ্নাংশ হবে। যেমনঃ -2-1=2; 89 আবার, তাদের গুণফলের অর্ধেক জোড়, বিজোড় যেকোন সংখ্যা হতে পারে। যেমনঃ (8×9)/2=36; (6×7)/2=21 উত্তরঃ খ  

সমস্যা-

ab উভয়েই ধনাত্মক জোড় সংখ্যা হলে, নিচের কোনটি অবশ্যই জোড় সংখ্যা হবে?
  1. ab
  2. (a+1)b
  3. ab+1
ক. 1 only খ. 1 & 2 গ. 1 & 3

সমাধান

স্পষ্টত, a+1 বিজোড় সংখ্যা। মনে করি, a=4 এবং b=2 তাহলে, ab = 42 = 16; (a+1)b = 52 = 25; ab+1 = 43 = 64 আবার, মনে করি, a=2 এবং b=4 তাহলে, ab = 24 = 16; (a+1)b = 34 = 81; ab+1 = 25 = 32 উত্তরঃ গ  

গুণনীয়ক ও গুণিতক (Factors & Multiples)

একটি সংখ্যা আরেকটি সংখ্যা দ্বারা নিঃশেষে বিভাজ্য হলে,
  • দ্বিতীয় সংখ্যাটিকে প্রথম সংখ্যার গুণনীয়ক বা উৎপাদক বলে।
  • প্রথম সংখ্যাটিকে দ্বিতীয় সংখ্যার গুণিতক বলে।
91 ÷ 7 = 13; 91 ÷ 13 = 7. এখানে 7 ও 13 দ্বারা 91 নিঃশেষে বিভাজ্য। সুতরাং, 7 ও 13 হল 91 এর উৎপাদক বা গুণনীয়ক এবং 91 হল 7 ও 13 এর গুণিতক।  

মূলদ সংখ্যা

যে সকল সংখ্যাকে দুইটি পূর্ণ সংখ্যা ভাগফল আকারে প্রকাশ করা যায় তাকে মূলত সংখ্যা বলে। a ও b দুইটি পূর্ণ সংখ্যা হলে, একটি সংখ্যাকে ab আকারে প্রকাশ করা গেলে সংখ্যাটি মূলদ।
  • পূর্ণ সংখ্যা, প্রকৃত ও অপ্রকৃত ভগ্নাংশ সকলেই মূলদ সংখ্যা।
  • দশমিকের পরের ঘরগুলো সসীম হলে অর্থাৎ গণনাযোগ্য হলে, সংখ্যাটি মূলদ।
  • যেকোন পূর্ণবর্গ স্বাভাবিক সংখ্যার বর্গমূল মূলদ সংখ্যা।
যেমনঃ √81 = 9, √144 = 12 ইত্যাদি মূলদ সংখ্যা।
  • দশমিকের পরের ঘর গুলো অভিন্ন আকারে অসীম হলে সংখ্যাটি মূলদ।
যেমনঃ 2.345134513451… মূলদ সংখ্যা।
  • সকল পৌনঃপুনিক যুক্ত সংখ্যা মূলদ সংখ্যা।
 

অমূলদ সংখ্যা

যে সকল সংখ্যাকে 2 টি পূর্ণ সংখ্যার ভাগফল আকারে প্রকাশ করা যায় না তাকে অমূলদ সংখ্যা বলে।
  • পূর্ণবর্গ নয় এমন যেকোন স্বাভাবিক সংখ্যার বর্গমূল অমূলদ সংখ্যা।
∛9, √27, √44 ইত্যাদি অমূলদ সংখ্যা।
  • দশমিকের পরের ঘর গুলো ভিন্ন আকারে অসীম হলে সংখ্যাটি অমূলদ।
যেমনঃ 1.242442444… , π = 3.1415926... ইত্যাদি মূলদ সংখ্যা। √2748 একটি মূলদ সংখ্যা যদিও √27 এবং √48 উভয়েই অমূলদ সংখ্যা, কিন্তু √27×48 একটি মূলদ সংখ্যা।

প্রমাণ

এই ধরনের সংখ্যার যাচাইয়ে আমরা প্রথমেই হর ও লবের সাধারণ উৎপাদক বের করার চেষ্টা করব। আমরা সহজেই বুঝতে পারি √27 ও √48 এর সাধারণ উৎপাদক 3. √(27×48)=√(9×3×16×3)=√(9×3×4×4×3)=√(9×9×4×4)=3×4=12; যা একটি মূলদ সংখ্যা।