|
মনযোগ বাড়ানোর উপায় |
আপনার যদি পড়া জমে মাথায় পাহাড় চেপে বসে থাকে তাহলে এই পোস্টটা আপনারই জন্য। বিশ্বাস করুন আর নাই করুন - এই আর্টিকেলের ৫টি নিয়ম আপনার পড়া বা কাজের গতি অবশ্যই বাড়াবে।
সহজ কিন্তু খুবই কার্যকরী উপায় যেগুলো আপনার মনযোগ ও কর্মদক্ষতা উভয়ের জন্যই কাজে দিবে।
১. গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলিকে আগে শেষ করুন
সমস্যাঃ
স্বাভাবিকভাবেই প্রতিদিন একজন মানুষকে অনেকগুলো কাজ করতে হয়। এর মাঝে কোন কাজটি আগে আর কোনটি পরে করা হবে তা নিয়ে মনের মধ্যে সৃষ্টি হয় দ্বন্দ্ব। দ্বন্দ্বগুল কিন্তু বেশ মজার।
কোনো কোনো কাজ খুবই সহজ তবে সেগুলো কম গুরুত্বপূর্ণ, আবার কোনো কাজ বেশ জটিল ও সময়সাপেক্ষ তবে তা বেশ প্রয়োজনীয় । কিন্তু ‘এখন এত ভেজালের কাজ করতে ইচ্ছা করছে না’ বলে সেটি করা হয় না।
আবার কিছু কাজ এমনও থাকে যে, যেগুলোর আসলে তেমন কোনো প্রয়োজনই নেই, তারপরও সেগুলো করার জন্য যেন নেশায় পেয়ে বসে।
এভাবেই কোন কাজটা আগে করা উচিত আর কোনটা পরে - তা ভাবতে ভাবতেই অনেকটা সময় চলে যায়। শেষমেশ দেখা যায় কিছুই হয় না।
সমাধানঃ
এর সমাধান খুব সহজ।
- সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে সবার প্রথমেই একটি ডায়েরি ও কলম নিয়ে বসে যান।
- আজ সারাদিনে আপনার কি কি করতে চান তার একটি স্পষ্ট তালিকা তৈরি করুন।
- এবার তালিকাটির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটিকে চিহ্নিত করুন।
- দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজটিকে চিহ্নিত করুন। এভাবে সারাদিনের কাজগুলিকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ থেকে কম গুরুত্বপূর্ণ তালিকায় সাজিয়ে নিন।
- এবার খেয়াল করে দেখুন যে এই তালিকার সবকাজ আজ সম্পন্ন করতে পারবেন কিনা।
- যদি আপনার উত্তর ‘না’ হয়, তবে সারাদিনে শেষ করা যাবে এরকম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোকে মার্ক করে ফেলুন এবং এই কাজগুলোকের শেষ করার মত মানসিকতা নিয়ে দিন শুরু করুন।
- সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি সবার আগে করে ফেলুন।
- এরপর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করুন, এভাবে একের পর এক করতে থাকুন।
যখন আপনার সবথেকে প্রয়োজনীয় কাজটি শেষ হয়ে যাবে তখন দেখবেন যে মনের মাঝে এক প্রকার শান্তি অনুভব করছেন। যা আপনাকে পরের কাজ করতে উৎসাহিত করবে।
২. পথের কাঁটা সরিয়ে ফেলুন
সমস্যাঃ
প্রচন্ড উদ্দাম নিয়ে পড়তে বসলো রাফি। মনেমনে প্লান করেছে তিন ঘন্টার মাঝে ফিজিক্সের একটি চ্যপ্টারের গানিতিক সমস্যাগুলো শেষ করবে।
শুরুটা বেশ ভালই ছিল। কিন্ত ২৫মিনিট পর হটাৎ করেই মোবাইলটা চিৎকার করে উঠল তার। চমকে ঘুরে তাকালো রাফি। তারপর বুঝতে পারলো যে তেমন কিছু না, ফেসবুকের নোটিফিকেশন এসেছে।
ফোনটা হাতে নিয়ে ফেসবুক অ্যাপে ঢুকলো। উগান্ডার এক ফ্রেন্ড চাইনিজ একটি গ্রুপে পোস্ট করেছে। তারই নোটিফিকেশন পেয়েছে রাফি। পোস্টটা চেক করে অ্যাপ থেকে বের হতেই যাচ্ছিল সে, হটাৎ চোখে পড়ল গতকালের রিয়াল মাদ্রিদ এর বিপক্ষে মেসির দুর্দান্ত গোলের ১টি ছবি।
পোস্টটা পড়ার লোভ সামলাতে পারল না রাফি। পোস্টট পড়তে পড়তে একসময় তার ইচ্ছা হল গোলটা দেখার। রাফি এবার চলে গেল ইউটিউবে। মেসির গোল দেখলো সেখানে, এরপর কে সেরা (রোনালদো নাকি মেসি) তা নিয়ে কিছু হাড্ডাহাড্ডি তর্ক দেখলো। এরপর আরিজিতের নতুন গানটা একবার শুনে যখন ফোন রাখল। তখন অলরেডি ৩ ঘন্টা হতে আর ১৫মিনিট বাকি আছে।
ওপরের ঘটনাটি কাল্পনিক হলেও এটা আমাদের সবার জীবনেই একবার হলেও ঘটেছে। ‘উদ্ভট’ কোনো এক কারনে খুব ইম্পরট্যান্ট কোনো কাজ থেকে মনযোগ সরে গেছে অন্যদিকে – এইরকম টা অনেকের নিত্যদিনের ঘটনা। (বিঃদ্রঃ লেখকের জীবনে এমন ঘটনা কয়বার ঘটেছে তা পাঠকদের না জানতে চাওয়াই ভাল)।
আসুন এই ‘উদ্ভট’ সমস্যাগুলোকে এড়িয়ে যাওয়ার কিছু টিপস জেনে নেই।
সমাধানঃ
- কাজ শুরু করার আগে ২/৩ মিনিটের জন্য চুপ করে বসুন। এই সময় কিছুই করবেন না।
- এই সময়টাতে আনুধাবন করার চেষ্টা করুন, আপনি যে কাজটা করতে যাচ্ছেন তার গুরুত্ব কতটা। একই সাথে ভাবুন কাজটি বরাদ্দ সময়ের মধ্যে করতে না পারলে কি কি সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে আপনাকে।
- এবার ভেবে দেখুন যে এই সময়ের মধ্যে আপনার মনযোগ নষ্ট করতে পারে কি কি। সেগুলোকে এবার এমনভাবে সরিয়ে রাখুন যেন আপনার পথের কাঁটা হতে না পারে সেগুলো।
- এবার কাজ শুরু করুন।
এভাবে একবার চেষ্টা করে দেখুনতো, অন্যদিনের তুলনায় কোন পার্থক্য অনুভব করতে পারছেন কিনা?
৩. 2-Minutes Rule
ব্যক্তিগতভাবে এটা আমার সবচেয়ে পচ্ছন্দের টিপস। দুই মিনিট রুলসটি হল, যে কাজটি শেষ করতে আপনার ২ মিনিটের কম সময় লাগবে, তা তৎক্ষণাৎ করে ফেলতে হবে।
যেমন, কোনো ইমেইলের রিপ্লাই দেয়া, সকালের পত্রিকা দিয়ে গেছে কিনা দেখা, আপনার কাজের ডেক্সটা গুছিয়ে ফেলা ইত্যাদি।
সমস্যাঃ
এই থিওরিতে ২টি সমস্যা সামনে আসে।
- কিছু কাজ ২মিনিটে শেষ হবে না তবে ৩/৫ মিনিটে শেষ হয়ে যাবে। এগুলো কি এই রুলসের মধ্যে পড়বে?
- কিছু কাজ ২ মিনিটে শেষ হতেও পারে আবার নাও পারে। সেগুলো কি করা হবে? যেমন – আপনি একটি মেইলের রিপ্লাই দিলেন। এখন যদি ওপর দিক থেকে রিপ্লাই দেয়া না হয় তবে তা ২মিনিটের মাঝেই শেষ হয়ে যায়।
কিন্তু যদি ওপাশ থেকে রিপ্লাই আসে তাহলে হয়তো কিছুক্ষন ফরমাল চ্যাট করতে হতে পারে, সেক্ষেত্রে ১০/১৫মিনিটও লাগতে পারে।
সমাধানঃ
১ এর সমাধান হল, হ্যাঁ আপনার উচিত কাজটি করে ফেলা। এতে হয়তো আপনার ২/৩ মিনিট বেশি লেগে যাবে তবে মানসিক ভাবে অনেকটাই হালকা হয়ে যাবেন।
আর ২ এর উত্তরটা আসলে আপনার কাছেই আছে। আপনাকে বুঝে নিতে হবে যে যদি সময় বেশি ব্যয় হয় তবে তা অন্য কোন গুরুত্বপূর্ণ টাস্কের ক্ষতি করবে কিনা।
যদি তেমন কোন সমস্যা না থাকে তাহলে আমার মতে কাজটা শেষ করে ফেলাই ভাল।
৪. পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন
এটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত যে, ঘুম কম হলে মানুষের উৎপাদনশীলতা ও মননশিলতা কমে যায়। যা আমাদের দৈনিক কাজের ওপরও বেশ প্রভাব ফেলে।
সমস্যাঃ
পর্যাপ্ত ঘুমের ঘাটতির কারনে যেসকল সমস্যা হয় তার কয়েকটি নমুনাঃ
- ঘুমের ঘাটতি আপনার বাকশক্তির ওপর প্রভাব ফেলে। অর্থাৎ কথা বলতে ইচ্ছা করে না।
- মেজাজ খিটখিটে করে তোলে।
- নিয়মিত ঘুমের ঘাটতি ডিপ্রেশনের দিকে নিয়ে যায়।
- স্মৃতিশক্তি দুর্বল করতে থাকে ঘুমের ঘাটতি।
- পর্যাপ্ত ঘুমের ঘাটতি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে বাধা দেয়।
সমাধানঃ
ঘুমের ঘাটতি যেন না হয় তার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। কিছু সহজ নিয়ম মেনে চললে এই ঘুমের সমস্যা প্রায় ৯৫ শতাংশ কমে আসে।
- প্রতিরাতে নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানোর অভ্যাস করা।
- বেশি রাত না জাগা। রাত ১০/১১টার মধ্যে ঘুমিয়ে যাওয়া সবচেয়ে ভাল অভ্যাস।
- সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস করা। এতে যেমন মন প্রফুল্ল থাকে তেমন দিনের জন্য (মানসিক ভাবে!) ২/৩ ঘণ্টা সময় বেশিও পাওয়া যায়।
- সন্ধ্যার পর থেকে ঘুমানোর আগে পর্যন্ত মোবাইল, কম্পিউটারে সময় কম দেয়া। মোবাইল, কম্পিউটারের স্ক্রিনের আলো আমারদের মস্তিষ্ককে বেশ চঞ্চল করে তোলে। যা দ্রুত ঘুম আসতে বাঁধা দেয়।
- সারাদিনে পর্যাপ্ত পানি পান করা ঘুমের জন্য বেশ ভাল।
একটি গবেষনায় দেখা গেছে, ৭/৮ ঘন্টা ‘sound sleep’ এ অভ্যস্ত একজন শিক্ষার্থী অন্যদের তুলনায়
৫০% বেশি মনযোগী হয় এবং সঙ্কটাবস্থায়
৪৩% দ্রুত ও কার্যকরী সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।
৫. প্রতি সকালে শারীর চর্চা করুন
মাত্র ২০ মিনিটের সকালের ব্যায়াম আপনার ফোকাসকে অনেকটাই উন্নত করতে পারে।
যেকোন ২/৩টি ব্যায়াম বেছে নিতে পারেন আপনি যেগুলা আপনার হার্টকে একটু ব্যাস্ত করে তুলবে ও শ্বাসপ্রশ্বাস কিছু সময়ের জন্য দ্রুত করবে। সেটা হতে পারে জগিং, ইয়োগা, টেনিস কোর্টে প্রাকটিস করা অথবা আপনার পছন্দমত যেকোন কিছু।
প্রতিদিনের ঘাম ঝরানো ২০মিনিট আপনার জীবনমান ও মনযোগ কতটা উন্নত করে তুলতে পারে তা আপনি বুঝতেও পারবেন না। হটাৎ যখন একদিন কোন পার্টিতে আপনার অফিস কলিগরা আপনাকে ইঙ্গিত করে বলবে "
he is naturally gentleman.” সেদিনই কেবল অনুধাবন করতে পারবেন এই ৫টি টিপসের গুরুত্ব।